আলতাব হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার
নাটোর সদর উপজেলার দরাপপুর গ্রামের শাহজাহানের এক করুণ কাহিনি। সুজাব আলী মন্ডল ১৯৭০ সালে মৃত্যুবরণ করেন, রেখে যান স্ত্রী, বড় ছেলে শাহজাহান , মেয়ে জহুরা ও ছোট মেয়ে লিপিকে। সুজাব আলীর চার ভাই—সুজাব আলী, নজাব আলী, সাহেব আলী ও কনিষ্ঠ কহিনূর মন্ডল। ১৯৫০-এর দশকে দুই ভাই—সুজাব আলী ও কহিনূর মন্ডল নাটোরের দরাপপুরে বসতি স্থাপন করেন। বড় ভাই হিসেবে সুজাব আলী ছোট ভাইকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই যেখানে সম্পত্তি কেনেন, সেখানে ছোট ভাইয়ের নামেও অর্ধেক লিখে দেন।
কিন্তু ১৯৭০ সালে সুজাব আলী মারা যাওয়ার পর, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে কহিনূর মন্ডল সম্পত্তির লোভে বিধবা ভাবিকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এতিম শিশু শাহজাহান ও তার দুই বোনকে নিয়ে তাদের মা পূর্বপুরুষের ভিটে সিরাজগঞ্জে আশ্রয় নেন। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁতশিল্পে সুতা তোলার কাজ করে সন্তানদের মানুষ করেন।
সময় গড়ায়। শাহজাহান যখন কর্মক্ষম হয়, তখন চাচা কহিনূর মন্ডল তাকে নাটোরের বাড়িতে নিয়ে যান। ছেলের মতো রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে ঘটেছিল উল্টো। শাহজাহানের কঠোর পরিশ্রমে কহিনূর ১৫-১৬ বিঘা জমি ক্রয় করেন, কিন্তু এক শতকও ভাগ দেননি।
পরে সুজাব আলীর আরেক ভাই সাহেব আলী নাটোরে ফিরে এলে শাহজাহান,চাচা সাহেব আলীর মেয়ে,চাচাতো বোনকে বিয়ে করে পিতার সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিছু জমি ফিরে পেলেও চাচা কহিনূর মন্ডলের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ব্যবসার নাম করে শাহজাহানের টাকা আত্মসাৎ করেন, কিন্তু ব্যবসার লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাওয়ায় হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, সেখানে শাহজাহান ক্ষোভে কহিনূর মন্ডলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।
এরপরই নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কহিনূর মন্ডল হাসপাতাল থেকে ফিরে সাহেব আলী ও শাহজাহানকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন। পুরাতন বাড়ির ২৩ শতক সম্পত্তি রেকর্ড অনুসারে সুজাব আলী ও কহিনূর মন্ডলের নামে অর্ধেক করে বিভক্ত ছিল। নতুন বাড়ির ২১ শতকের অর্ধেক, অর্থাৎ সাড়ে ১০ শতক এবং পুরাতন বাড়িতে বাবার অংশের সাড়ে ১১ শতক জমির অধিকারী হন।
২০১৫ সালে যখন শাহজাহান নতুন বাড়িতে পাকাঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেন, তখন কহিনূর মন্ডল ও তার ছেলে শহিদুল ও জাহাঙ্গীর বাধা দেন। দাবি করেন, সামনে ৮ শতক জমি তার শ্বশুর রিয়াজউদ্দিন মৌলভীর নামে রেকর্ড হয়েছিল, যা কহিনূর পরে ক্রয় করেন। অথচ সত্য হলো, ১৯৭২ সালে কহিনূর তার শ্বশুরকে তিন বছর থাকার সুযোগ দিলে ভুলবশত রেকর্ড হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তিনি তিনি রেকর্ড সংশোধন না করে শশুরের আট শতক ক্রয় করে নেওয়ার দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হয়, বৈঠকের সিদ্ধান্তে শাহজাহান রাজি হলেও কহিনূর ও তার ছেলেরা নতুন করে সমস্যা তৈরি করে। উপায় না দেখে শাহজাহান ২০১৫ সালে নাটোর জর্জ কোর্টে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করেন, যেখানে আদালত তার পক্ষে রায় দেন। এছাড়াও, বাবার মাতৃত্বীয় সম্পত্তি হিসেবে ২৮ শতকের মধ্যে মাত্র ১৮ শতক নিজের দখলে আনতে সক্ষম হন।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের কিছু দিন পরে,কহিনূর মন্ডল ও তার ছেলেরা আবারও ষড়যন্ত্র করে। ১৯৭১ সালে বিধবা ভাবিকে যেমন তাড়িয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় শাহজাহানকে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বাড়ি ছাড়া করে। পুরাতন ও নতুন উভয় বাড়ির দখল নিয়ে নেয় শহিদুল ও জাহাঙ্গীর।
বর্তমানে শাহজাহান তার ছেলের বগুড়ায় কেনা বাড়িতে বসবাস করছেন। আদালতের রায় অমান্য করে জোরপূর্বক দখল নেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি ন্যায়বিচার চান। তিনি আবারও পৈতৃক ভিটেতে ফিরে যেতে চান, চান ন্যায়বিচার।
এই অন্যায়ের কি শেষ নেই? আদালতের রায় মান্য না করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কী ভূমিকা নেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস এম নজরুল ইসলাম
সহ-সম্পাদকঃ আবুল কাশেম
বার্তা সম্পাদকঃ রাফসান জাহান
অফিসঃ ৫৬/৫৭ শরীফ ম্যানশন(৪র্থ তলা)মতিঝিল কমার্সিয়াল এলাকা,ঢাকা-১০০০।রেজিস্ট্রি অফিসঃ চৌকস ভবন,চরকালিগন্জ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা -১৩১০
ফোনঃ ০২২২৬৬৩৯৮৪৭
মোবাইলঃ ০১৬০০-৭২২২২৯,০১৯২০-০০৩০৮১
ইমেইলঃchoukasinfo@gmail.com,dainikchoukos@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক চৌকস. All rights reserved.