মো: ওয়াসিকুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার।
ভোলা – বরিশাল – খুলনা পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প স্থগিত / বাতিলের প্রতিবাদে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোঃ বাবুল হাওলাদার। সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহসিন এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের অন্যতম সদস্য মানবাধিকার সংগঠক এস এম দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য যথাক্রমে শিক্ষক বীর মুক্তিযুদ্ধা নিতাই পাল, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, আমরা বৃহত্তর খুলনা বাসির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, কবি ও সাংবাদিক আবু আসলাম বাবু, নজরুল গবেষক কবি সৈয়দ আলী হাকিম, কবি নুরুন্নাহার হীরা, আজকের জনকথার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আহম্মেদ হোসাইন ছানু, নতুনতারা সমাজকল্যাণ ও সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর রহমান মিনা, কে এইচ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা খ ম শাহীন হোসেন, অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান, সাবেক ছাত্র ও শ্রমিক নেতা এস এম চন্দন, খুলনা সাহিত্য ও সংস্কৃতিক কেন্দ্র( খুসাস ) এর সাধারণ সম্পাদক কবি আজাদুল হক আজাদ, খুলনা আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস, কবি হোসাইন মাহামুদ বাচ্চু, কবি রহমত আলী, এজাজুর রহমান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য ও সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের লক্ষে পেট্রো বাংলার অধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভেড়ামারা হতে খুলনায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু করে ২০১২ সালে। এ প্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারা হতে খুলনা আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ বসানোর পর কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রকল্প পতিত ঘোষণা করে পরবর্তীতে পাইপসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে পেট্রো বাংলার উদাসীনতাই মূলত দায়ী। এ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হলেও মজার ব্যাপার কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হয়নি। পরবর্তীতে ভোলা – বরিশাল – খুলনা রুটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষ পুনরায় আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় ভোলা- বরিশাল সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বেশ কিছু কাজ এগোনের পর অকম্মৎ গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প স্থগিত / বাতিল করে বরিশাল ঢাকা রুটে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তের সংবাদ এ অঞ্চলের মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। পুনরায় স্বপ্নভঙ্গের খবর আমাদেরকে রীতিমতো হতাশ করে। ৫ মার্চ চেয়ারম্যানের এক স্বাক্ষরে সম্ভাবনাময়ী এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ করে শিল্প উৎপাদনের উজ্জল সম্ভাবনার সম্ভাব্য উন্মোচিত দ্ধার বন্ধ হয়ে যায়। খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল গুলো লোকসানের অজুহাতে রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্ধারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বন্ধ করে দেয়। এর পূর্বাপর আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প বন্ধ করে শিল্পনগরী খুলনাকে বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। খুলনায় ন্যূনতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানেকশনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে, বন্ধ কারখানাগুলোর যান্ত্রিক ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে, গ্যাসের ব্যবহার উপযোগী করে পতিত থাকা বিশাল অংকের ভূমি এবং অবকাঠামো, সাথে সাথে বিপুল অংকের বেতন ভাতা প্রাপ্ত জনবল কাজে লাগিয়ে এগুলোকে লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব। এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থারও অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য। খুলনায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশিও ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যে সুযোগ তৈরি হবে তাতে করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। বাড়বে ব্যক্তি উদ্যোক্তাও। গ্যাস না থাকার কারণে এ অঞ্চলের বিনিয়োগে উৎসাহ নেই শিল্প উদ্যোক্তাদের। একটি দেশের টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের অভ্যন্তরের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে সুপরিকল্পিতভাবে। উন্নয়ন হতে হবে সুষম। ছোট আয়তন এবং সীমিত সম্পদ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। খুলনায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে বা বন্ধ শিল্পকারখানা চালু হলে শুধুমাত্র খুলনার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই হবে না, কম-বেশি এর সুবিধা ভোগ করবেন সমগ্র দেশের মানুষ। খুলনায় উৎপাদনের চাকা সচল হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। সুতরাং খুলনায় গ্যাস সরবরাহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি কোন দয়া বা করুণার বিষয় নয়। এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্ন। সম্ভাবনাময়ী একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অবহেলিত বঞ্চিত রেখে উন্নয়নের মূল ধারা থেকে পাশ কাটিয়ে রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সীমিত ভুমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র রাজধানী বা ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা মারাত্মক বৈষম্যমূলক তাই ই না এটি উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরিপক্ষতা এবং অদূরদর্শিতার পরিচয়াক। যদিও আবহমানকাল ধরে এ দূষনীয় চর্চাটি চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নিকট থেকে আমরা কোনোভাবেই এমনটা প্রত্যাশা করিনা। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে খুলনা নাগরিক সমাজ প্রয়োজনের সর্বস্তরের নাগরিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে। উপর উল্লেখিত দাবি পূরণের লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। পরবর্তীতে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।