হেলাল শেখঃ ঢাকার জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সাভার ও আশুলিয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গত এক মাসে ২জন সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি ও ৫জন সাংবাদিকের উপর নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারগণ নিরব ভুমিকায় থাকার কারণে সাংবাদিকদের উপর আবারও হামলা হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল। মাইনুল ইসলাম নামের একজন সাংবাদিক থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ ব্যবস্থা না নেয়ায় আত্মহত্যা করতে চেয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
সাভার মডেল থানার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত (২ এপ্রিল ২০২৫ইং) তারিখ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে দৈনিক আমাদের খবর এর সাংবাদিক মাইনুল ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তার উপর নৃশংসভাবে হামলা করে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সামাইর এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শাহেদ আহমেদ আদনান চৌধুরী ও তার লোকজন। থানায় অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আদনান চৌধুরী (৩০) এর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন মাদকের কারবার করে আর এইসব মাদকের বেচা—কেনার ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর হামলা ও মারপিট করে তারা, এর অনেক তথ্য প্রমান রয়েছে।
সাভার মডেল থানায় অভিযোগকারী সাংবাদিক মোঃ মাইনুল ইসলাম শেখ জানান, গত (২ এপ্রিল ২০২৫ইং) দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার অভিযোগের ১ নং বিবাদীর বড় ভাই সালেহ আহমেদ দানিয়াল চৌধুরী (৩৫) তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন করিয়া আমাকে উল্লেখিত ১নং বিবাদীর মাদক ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎকার বক্তব্য দিবে মর্মে সাভার বিরুলিয়াস্থ সামাইর সিএনজি ফিলিং স্টেশন এর প¦ার্শে একটি চায়ের দোকানে ডাকিয়া পাঠায়। অতপর আমি ওই ১নং বিবাদীর মাদক ব্যবসায়ের বিষয়ে সাক্ষাৎকার বক্তব্য গ্রহণ করা কালে ১নং বিবাদী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত ভাবে এলোপাতাড়ি কাঠের বাটাম দিয়ে মারপিট করে, আমার ডান হাতের কব্জি উপর ও কইনের উপরের অংশে নীলাফুলা জখম করে। এ সময় ১নং বিবাদীর কাঠের বাটামের আঘাতে আমি মাটিতে পড়িয়া গেলে তখন ১নং বিবাদীর বড় ভাই আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও এলোপাতাড়ি ভাবে কাঠের বাটাম দিয়েই মারপিট করে এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয় এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় আমি আহত হওয়ার পর লোকজন আমাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন, সেখানে চিকিৎসা নিয়ে একটু সুস্থ্য হয়ে আমি সাভার মডেল থানায় মামলা করার জন্য শাহেদ আহমেদ আদনান চৌধুরীকে ১নং বিবাদী করে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করে সাংবাদিক মাইনুল ইসলাম আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন, তিনি আরো বলেন, আমার এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমি আত্মহত্যা করবো আর আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে পুলিশ। তিনি আরো বলেন যে, গত এক মাসে ২জন সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে শ্রমিক নেতা মিজান, এরপর আরও ৪—৫জন সাংবাদিকের উপ নৃশংস হামলা করার ঘটনায় সাভার আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কাউকে আটক করেনি।
সাংবাদিক রাসেল ও সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ জানান, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা—১৯ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সৈনিক—শ্রমিক নেতা মিজানুর রহমান মিজানের চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমাদের সাংবাদিকদের প্রানে মেরে ফেলে লাশ গুম করার হুমকি দিয়েছে। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় আমরা পৃথক দুইটি অভিযোগ করেছি কিন্তু পুলিশ মিজানকে আটক করেননি বলেই আবারও মিজান বলে পুলিশ ও সাংবাদিকরা আমার কিছুই করতে পারবে না। জাতি জানতে চায় মিজানের খুঁটির জোড় কোথায়? মার্চ মাসেই আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় দৈনিক দেশের কণ্ঠ ও তৃতীয়মাত্রা পত্রিকার সাংবাদিক খোকন হাওলাদারের উপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের রূপায়ন আবাসন—১ এর মাঠের পাশে পাবনারটেক এলাকায় একটি ঝুটের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মাই টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট হাফিজুর রহমান ও দৈনিক ভোরের পাতার স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুল ইসলাম অনিকসহ কয়েকজন সাংবাদিকের কাজে বাঁধা প্রদান ও হেনস্তা মারপিট করার অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ২০২৫ইং) এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) মোঃ কামাল হোসেন। মার্চ মাসেই আশুলিয়ার জামগড়া ফুটপাত নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক সেলিম হামলার শিকার হোন। এরপর মার্চ মাসে রোজা থাকা অবস্থায় সাংবাদিক বাবুল এর উপর হামলা ও হুমকি প্রদান, এরপর গত কয়েকদিন আগে মধ্যরাতে সাংবাদিকের বাসায় গিয়ে সন্ত্রাসী হামলা, বিবাদীদের আটক না করে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের সাথে হোটেলে বিরিয়ানি খেলেন আশুলিয়া থানার (এসআই) মাসুদ, এরকম চলতে থাকলে পুলিশ বাহিনীর বদনাম হবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেননা তা জাতি জানতে চায়।
সাংবাদিক মাইনুল ইসলামের উপর মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনা ও থানায় অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, বাদীকে থানায় আসতে বলা হয়েছে, তিনি আসলে বিষয়টি শুনে জেনে তদন্ত করে দোষীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। পর্ব—১।