পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবিলম্বে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থী সম্পৃক্ততা, সচেতনতা কার্যক্রম এবং সহজলভ্য পরিবেশবান্ধব বিকল্প সরবরাহ ছাড়া প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব নয়।”
শনিবার রাজধানীর বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আয়োজিত ‘টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ’ শীর্ষক সচেতনতা কর্মসূচির প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্লাস্টিক থেকে টেকসই বিকল্পে যেতে সময়, শ্রম এবং ভোক্তাদের আচরণগত পরিবর্তন অনিবার্য। বহুদিনের ভোক্তা-অভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিহার করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার জরুরি।”
মেয়েদের পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ তৈরিতে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ
পরিবেশ উপদেষ্টা মেয়েদের পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ তৈরির উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, মুনাফানির্ভর ব্যবসায়িক মানসিকতা পরিহার করে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে এলে একদিকে যেমন প্লাস্টিক দূষণ কমবে, তেমনি পাটসহ স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিগুলোও শক্তিশালী হবে।
“প্লাস্টিক ফ্রি” সুবিধা নয়—ভুল ধারণা
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিককে ‘ফ্রি’ মনে করার প্রবণতাকে ভুল ধারণা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্লাস্টিক উৎপাদনে শ্রম, বিদ্যুৎ, যন্ত্রপাতি ও আমদানিকৃত কাঁচামালসহ নানামুখী খরচ জড়িত থাকে। এর গোপন মূল্য শেষ পর্যন্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকেই দিতে হয়।
বঙ্গোপসাগরে প্লাস্টিক দূষণ উজান থেকে আসা বর্জ্যের ফল
বঙ্গোপসাগর বিশ্বের নবম সর্বাধিক প্লাস্টিকদূষিত সামুদ্রিক অঞ্চল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার নয়, বরং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উজান থেকে বয়ে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য এর মূল কারণ।
তিনি আরও বলেন, “রিসাইক্লিং জনপ্রিয় হলেও এটি জ্বালানি-নির্ভর এবং রাসায়নিকভাবে জটিল। তাই প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য বৃদ্ধি করা এবং উৎপাদকদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করাই মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী। বিশেষ অতিথি ছিলেন—চুয়েটের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আসিফুল হক, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম এবং চুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর প্রফেসর ড. ম. ফারজানা রহমান জুথি।
